ডেস্ক নিউজ : ‘আমাকে চাপ দিয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে’ বলে জানিয়েছেন, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘আমি বিনোদনের জন্য বাসা থেকে বের হয়েছি-এই বিষয়টি আমাকে চাপ দিয়ে, এমনকি মারধর করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন ‘আমাকে যা লিখে দেওয়া হয়েছে, আমি তাই আদালতে দিয়েছি।’
শনিবার (৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিজ বাসভবনে হঠাৎ ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওই দিনের ঘটান সম্পর্কে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘গত ৩ জুলাই ভোরে আমি কম্পিউটারে লিখতে গিয়ে দেখি, চোখ খুলতে পারছি না, শুকনা। লেখা কিছুই পড়তে পারছি না। এ অবস্থা হলে ওষুধ কেনার জন্য ২৪ ঘণ্টা খোলা ফার্মেসিতে যাই। ওই সময় তিন জন লোক আমাকে ঘিরে একটি সাদা মাইক্রোবাসে জোর করে তুলে আমার চোখ বেঁধে ফেলে। এ সময় মোবাইল ফোন আমার হাতেই ছিল, আমি আমার স্ত্রী ফরিদা আক্তারকে ডায়াল করা অবস্থায় ছিল। ভাগ্যক্রমে তাকে আমি প্রথম ফোন করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, এরপর বাঁচার জন্য টেলিফোন করা, টাকা পাঠানোসহ অপহরণকারীরা যা কিছু করতে বলে, আমি তাই করি। যেখানে আমাকে ছেড়ে দেয়, আমি চিনি না। আমি বুঝতে পারি, তারা আমার ওপর নজরদারি রেখেছে। তাদের নির্দেশ মতো সন্ধ্যায় হানিফ পরিবহনের গাড়িতে উঠলে গাড়িতে তারা আমাকে বাসের পেছনে বসিয়ে দেয়। আমি নিশ্চুপ হয়ে ভীত, বিধ্বস্ত ও শারীরিক অসুস্থতায় নিস্তেজ হয়ে পড়ি। শোরগোল শুনে আমি জেগে উঠি। কিছু সাদা পোশাকের লোক জোর করে আমাকে নামিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
তিনি আরো বলেন, আমাকে আবার মারার জন্য নামিয়ে নিচ্ছে ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। সাদা পোশাকের কিছু ব্যক্তি র্যাবের দিকে বন্দুক তুলে আমাকে শাসিয়ে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে উভয়ের মধ্যে প্রচণ্ড তর্ক হয়। কিন্তু র্যাব রীতিমতো ছোটখাটো যুদ্ধক্ষেত্রের মধ্য দিয়ে আমাকে তাদের গাড়িতে ওঠায়। আমার স্ত্রী ফরিদা আক্তারের সঙ্গে কথা বলে আমাকে আশ্বস্ত করে।কিন্তু সাদা পোশাকের লোকগুলো জোর করে গাড়ি থেকে নামিয়ে আনার চেষ্টা করে।’
তিনি বলেন, আমি চাই, বিচার স্বাধীন গতিতে চলুক। আমাকে গুম করা হয়েছিল। আমি একজন ভিকটিম। অথচ আমাকে মামলার আসামি করা হয়েছে।’
সাংবাদিকরা প্রশ্নের জবাবে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘আজই শেষ না, আরও কথা হবে। আমি শুধু আমার একার জন্য বসিনি। দেশে যারা গুম হয়েছে, তাদের জন্যও আপনাদের সঙ্গে বসেছি।’
উল্লেখ্য, গত ৩ জুলাই ভোররাতে মোহাম্মদপুর লিংক রোডের হক গার্ডেনের নিজ বাসা থেকে বের হন ফরহাদ মজহার। এরপর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যশোর নওয়াপাড়া থেকে তাকে উদ্ধার করে র্যাব-৬। পরে তাকে আদাবর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর তাকে মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ফরহাদ মজহার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে তার স্ত্রীর করা যে জিডিটি মামলা আকারে নেওয়া হয় তার পরিপ্রেক্ষিতে ভিকটিম হিসেবে ফরহাদ মজহার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিও দেন।